Skip to content

সেলিম আল দীন: একাত্তর জয়ন্তী

শামীম আহসান
বাঙলা নাটকের বাঁক বদলের কারিগর। আমাদের নাটকের নিজস্ব রঙ রূপ রস চলন বলন ঠাট যে আছে তা রবীন্দ্রনাথ দেখিয়েছিলেন তাঁর নাটকে, বলতে হয় সেই পথের একনিষ্ঠ পথিক হয়ে সেলিম আল দীন নির্মান করতে পেরেছিলেন এক স্বতন্ত্র নাট্য ভাষা, শিল্প ভাষা। আমরা উপনিবেশিক আমলের নাটক থেকে বের হয়ে নিজস্ব নাট্য পরিবেশন করার রীতি রেওয়াজ পেলাম তাঁর কাছ থেকে। আমরা বলতে পারি আমাদের নাটকের নিজস্ব আঙ্গিক আছে। যা সেলিম আল দীন তার গবেষণায় তুলে এনেছেন এবং সে অনুযায়ী নাটক রচনা করে দেখিয়েছেন এর লেখ্যরূপ কেমন হবে। আর নাসির উদ্দীন ইউসুফ মঞ্চে অনুসন্ধান লব্দ শিল্পের প্রয়োগ ঘটিয়ে যৌথভাবে প্রতিষ্ঠা করেছেন বাঙলা নাটকের নিজস্ব আঙ্গিক।

একথা সত্য যে আমাদের এইসব উপাদান আগে থেকেই ছিল, যেটি কে আমরা বলি হাজার বছর আগে থেকে, অথবা তারও আগে থেকে, এইসব উপাদান তিনি অনুসন্ধান করেছেন, আমাদের জীবন ও সংস্কৃতির এই ছোট বড় অংশ গুলিকে বিশ্লেষণ করে খুজে বের করেছেন এর নির্যাস, রূপ রীতি। তিনি দেখালেন আমাদের কিসসা কাহিনি, কথন, গায়েন, সুর ও ছন্দে আবিষ্ট দেহভঙ্গি বিপুল সম্ভানাময় ও সমৃদ্ধ। সে নির্নয়ে তিনি রচনা করলেন তাঁর নাটক সমূহ। এই সব কিছু মিলে যে একক শিল্পের রূপ তাই হল তার অদ্বৈত শিল্প।

সেলিম নাটক না বলে তার লেখা গুলিকে সামগ্রিক রূপে নাম করন করতে চাইলেন নন জেনেরিক হিসেবে অর্থাৎ গল্প, কবিতা, উপন্যাস, নাটক, নৃত্য, সঙ্গীত ইত্যাদি সব কিছুর সুসন্বয় হল তার রচনা। তেমনটি দেখাও যায় তার কিত্তনখোলা থেকে পরবর্তী সব রচনায়। এই পথ পাড়ি দিতে অনেক সমালোচনা তাকে সইতে হয়েছে। এখনও অনেকেই বলেন এগুলি নাটক নয়, কেউ বলেন দুর্বোধ্য, কেউ বলেন মধ্য যুগের ঘেরাটোপে আবদ্ধ। নানান বৈরিতা ছিল, আছে, থাকবে সৃজনের এটি অমোঘ নিয়তি, এই হল সৃজনের নান্দনিকতা। যত আলোচনা সমালোচনা ততই তার বিকাশ ও সমৃদ্ধি।

একাত্তরতম জন্মদিনে সেলিম আল দীনকে শোকার্ত হৃদয়ে শদ্ধা জানাই।
(সহযোগী অধ্যাপক, ঢাকা ইম্পেরিয়াল কলেজ।)

Leave a Reply

Your email address will not be published.