পারুল মা
গ্রাম থিয়েটার পত্রিকা – ৩৭ বর্ষ
আশ্বিন-কার্তিক ১৪২৬ OCTOBER 2019
- সম্পাদকীয়
- পারুল স্মরণ- নাসির উদ্দীন ইউসুফ
- স্বপ্ন পুত্রের স্বপ্ন
- প্রিয় পারুলভাবিও স্মৃতি হয়ে গেলেন
- ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই পারুলভাবিকে
- সত্তার গভীরে পারুলভাবি
- ক্ষমিও মাতা অভাগা সন্তানেরে- সালাম সাকলাইন
- স্মৃতির মন্দিরে
- দুখিনি রাজকন্যার কথা
- আমার পারুলভাবি
- আমার আপা পারুল
- পারুলভাবি: সকল কাঁটা ধন্য করে
- এ এক বিপর্যয়ের শোক
- অর্থপূর্ণতার খোঁজে আরেক জীবন
- সেলিমস্যারের কাছেই চলে গেলেন তিনি
- বাঙালি সংস্কৃতিচর্চায় মহীয়সী নারী বেগমজাদী মেহেরুন্নেসা
- প্রত্ননারী
- পারুল মা
- পারুল আপার পৃথিবী
- এই আক্ষেপ কোনোদিনই ঘুচবে না
- একজন পারুল ও শতপুত্রের জননী
- বেগমজাদী মেহেরুন্নেসা পারুল
- মা, মানুষ খুঁজছি মানুষ
- সবটুকু গ্রাম
- সান্দ্রতমা
- তিনতরঙ্গ-অথশৃগালকচ্ছপশশসংবাদ
- বেগমজাদী মেহেরুন্নেসার কলম থেকে
- সাক্ষাৎকার: বেগমজাদী মেহেরুন্নেসা পারুল
- স্মৃতি তোরঙ্গ : আলোকচিত্র
- আসাদুল্লাহ ফারাজীর সাক্ষাৎকার। গ্রাম থিয়েটার : পঁয়ত্রিশ বছরের বৃত্তান্ত
- ছোটদের নাটক- মহাপতঙ্গ
- সেমিনার। মৌলিক নাটকের সংকট ও উত্তরণের পথ : হামীম কামরুল হক
সামিউন জাহান দোলা
পড়ন্ত বিকেলে একটা নীল ট্যাক্সিক্যাব ছুটে চলেছে ল্যাব-এইড থেকে সাভার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আবাসস্থলের দিকে। জানালার বাইরে তাকিয়ে আছি স্থির আমি, অবিরাম কেঁদে চলেছি আর পাশে থেকে আমার হাত চেপে বসে আছেন আমার পারুল মা। বিরামহীন স্মৃতিচারণ করে যাচ্ছেন সেলিম আল দীন স্যারকে নিয়ে। সেই থেকেই খুঁজে পেয়েছিলাম পিতৃবিয়োগ থেকে মাতৃযোগ। আবাসস্থলে ফিরে পাগলের মতো খুঁজছিলেন স্যারের পাসপোর্ট যদি পাওয়া যায়। আমি বোকার মতো পিছে পিছে ঘুরঘুর করছিলাম আর কাঁদছিলাম। আমার কেবলি মনে হচ্ছিলো না না না, এই আশ্রয় আমি হারাতে দিবো না কিছুতেই। সেই যে পিছু নেয়া পারুল মায়ের আঁচলের সাথে।
যখনই দেখা হতো তখনি পা ছুঁয়ে আশীর্বাদ নিতে গেলে বুকে টেনে নিয়ে আশ্রয় দিতেন আর বলতেন ‘এই বুড়ি তোর খবর কী?’ যেমনি যত্ন করে আচার্য সেলিম আল দীনের সোনার অক্ষরগুলি বুকে আগলে রেখেছিলেন তেমনি তাঁর প্রিয় মানুষগুলো, সংগঠনগুলিকেও যেন বুকে আগলে রাখতে চাইতেন। আমার অভিনীত এবং নির্দেশিত প্রায় সবগুলো নাটকই তিনি দেখেছেন আর আশীর্বাদ করে গেছেন।
ফুলের নামে তাঁর নাম তাই তার সকল গুণ তারই মাঝে আশ্রয় নিয়েছে এত কোমল এত স্নেহময়ী যেন একবার জড়িয়ে ধরলে মনে হতো এই অনাথিনীর আর কোথাও যাবার প্রয়োজন নেই। সেলিম আল দীন স্যার চলে যাবার পর সেই শূন্য বাসাটিতে গিয়েছি কয়েকবার। সেখানে স্যার আর অন্বিতার ছবি দেখে আরো শূন্য মনে হতো বাসাটিকে। জানি না পারুল মা কেমন করে সেখানে শূন্যতাকে পূর্ণ করতেন! তিনি আমার জন্মদাত্রী ছিলেন না, কিন্তু তাঁকে দেখলেই নাড়ির টানের মতোই প্রাণের এক আকুল টান অনুভব করতাম। তাঁর মিষ্টি হাসি, কাঁচাপাকা চুল, তাঁর ছোট্ট সোনার দুল, সুতি শাড়ির সুবাস। তাঁর চশমার ফাঁকে চাঁদের স্নিগ্ধ নয়নতারা আমাকে শুধুই ডাকতো। যেখানেই থাকো না কেন পারুল মা তুমি ভালো থেকো। তোমার চলে যাবার ক্ষণে শিয়রে থাকতে পারিনি এই দুঃখ যাবে না কোনদিন। সুদূর পশ্চিমে বসে প্রাচ্যের টানে ছটফট করছিলাম। হঠাৎ বুক ভেঙে গেছে নোনা জলের স্রোতে। কিছুই করতে পারিনি। আমার শেষ বার্তা একটি রক্ত গোলাপ। তোমার কফিনের কাছে পৌঁছে দিয়েছিল মৌ এই কথা বলে- গোলাপটি রক্তের টান নয় তোমার আমার মাঝে ছিলো মা আর সন্তানের ভালোবাসার সুবাস যা থেকে যাবে চিরকাল। ভালো থাকো পারুল মা। স্যারকে বলো চিরকাল তাঁর আদর্শ আমাদের মাঝে থাকবে।