Skip to content

বগুড়া থিয়েটারের আয়োজনে বৈশাখী মেলা

আজ পৌর পার্ক ও টিটু মিলনায়তন চত্ত্বরে শেষ হল বগুড়া থিয়েটারের আয়োজনে ৬-১৩ মে ২০২২ আট দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা। বৃষ্টি ভেজা দিনে লালন শাহের গান পরিবেশন করেন উপমহাদেশের বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী শফী মন্ডল। খাচার ভেতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়, মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি, কে কথা কয় রে দেখা দেয় না…এমন সব চিরচেনা গানের সাথে আরো অনেক অল্পশ্রুত গান পরিবেশন করে উপস্থিত দর্শকদের মুগ্ধ করেন শফী মন্ডল।
৮ দিন আগে বৈশাখী মেলার উদ্বোধন করেছিলেন আরেক বাউল শিল্পী লতিফ সরকার। শুরুর সাথে শেষ টাও যেন এক মেলবন্ধনে মিলে গেলো আর সেটি হলো সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই। শেষ দিনে বিকেলে পরিবেশিত হয় সবুজ সারথি থিয়েটারের পিরিবেশনায় বিয়ের গীত, শিশুদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা ও কলেজ থিয়েটার বনাম বগুড়া থিয়েটারের মাঝে হাডুডু খেলা। হাডুডু খেলায় বগুড়া থিয়েটারের কাছে কলেজ থিয়েটার তিন পিয়েন্টের ব্যবধানে পরাজিত হয়।

বৈশাখী মেলায় বগুড়া থিয়েটার মেলা মঞ্চ থেকে সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে সাংস্কৃতিক আয়োজনের মাধ্যমে শান্তির বাতাবরণ ছড়িয়ে দিতে চেয়েছে। ভেদাভেদ ভুলে, ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে শাশ্বত বাংলার চিরায়ত সংস্কৃতিকে লালনের জন্য বগুড়া থিয়েটার দীর্ঘ ৪১ বছর উদযাপন করছে বৈশাখী মেলা। বিগত দুই বৎসর করোনার কারণে মেলা স্থগিত থাকলেও এ বছর যেন আবারো মানুষের পদচারণায় পৌরপার্কে প্রাণ ফিরে এসেছিল। প্রতিদিন মেলামঞ্চে পরিবেশিত হয়েছে মোরগ লড়াই, লাঠি খেলা, পাতা খেলার মত লুপ্তপ্রায় বিভিন্ন লোকজ খেলা।

টিটু মিলনায়তন চত্বরে বসেছিল বিভিন্ন কারু এবং মৃৎশিল্পের পণ্য কেনাবেচার স্টল। সৈয়দপুর থেকে আগত জগদীশচন্দ্র পাল নামের একজন মৃৎশিল্পী জানান, সময় পরিবর্তনের কারণে এ বছর মেলায় প্রথমদিকে মানুষের আনাগোনা কম থাকলেও যত দিন গড়িয়েছে ততোই মানুষের আগমন বেড়েছে এবং অনেক মানুষ তাদের আনা পণ্য ক্রয় করেছেন। তিনি আরো জানান, বগুড়া থিয়েটারের বৈশাখী মেলায় বরাবরই তিনি আসেন কারণ এখানকার ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত ভালো। একইসাথে বগুড়ার মানুষজন অত্যন্ত সৌখিন যারা মৃৎপণ্য কিনতে ভালবাসেন।

টিটু মিলনায়তন চত্বরের এক পাশে বসেছিল সংশপ্তক থিয়েটার এবং থিয়েটার আইডিয়ার আয়োজনে বিভিন্ন লোকজ সামগ্রী প্রদর্শনের একটি স্টল। এখানে হারানো অনেক লোকজ অনুসঙ্গ প্রদর্শন করা হয়েছে। যে সকল জিনিস একসময় ছিল মানুষের প্রতিদিনের সাথী কিন্তু বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় এসব এখন ব্রাত্য হয়ে পরেছে। স্টলটিতে তরুন প্রজন্মের ভিড় ছিল চোখে পরার মত।

এছাড়াও মেলায় শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল চোড়কি, নাগরদোলা, নৌকা খেলা।

সন্ধ্যায় সমাপনী আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বগুড়া থিয়েটারের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কৃষিবিদ বজলুর রশিদ রাজা, বক্তব্য রাখেন বগুড়া জেলা আওয়ামিলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক এস, এম শাজাহান, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের পুন্ড্র অঞ্চলের সমন্বয়কারী শাহাজাদ আলী বাদশা, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ সিদ্দিকী, মেলা কমিটির সদস্য সচিব তৌফিক হাসান ময়না। তিনি বগুড়া থিয়েটারের বৈশাখী মেলায় সর্বাত্মক সহযোগিতার জন্য বগুড়া পৌরসভা, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, উপদেষ্টা মন্ডলী, সাংবাদিক বৃন্দ, বগুড়া থিয়েটার এবং কলেজ থিয়েটারের সকল নাট্যকর্মী কে ধন্যবাদ জানান।
মেলা কমিটির পক্ষ হতে ওস্তাদ শফী মন্ডল, নৃত্য শিল্পী অমৃতা ও সমৃতা এবং সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট কে সম্মাননা জানানো হয়।

উল্লেখ্য বৈশাখী মেলাকে স্বার্থক করার জন্য ফারুক হোসেন স্টল কমিটি, দ্বীন মোহাম্মদ দীনু সাংস্কৃতিক কমিটি, জাকিউল ইসলাম সবুজ খেলাধুলা কমিটি, অলক পাল প্রচার প্রকাশনা কমিটি, রবিউল করিম ও সোবহানি বাপ্পী অনুষ্ঠান কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।
[বার্তা প্রেরক: অলক পাল]

Leave a Reply

Your email address will not be published.