কাজী সাইদ হোসেন দুলাল:
বাবু (সেলিম রেজা) এ তোমার কেমন চলে যাওয়া! আজ ২৬ জুলাই ২০২০ তারিখে ভোর ৫ টায় তুমি আমাদের ছেড়ে চলে গেলে, মাত্র ৩৯ বছর বয়সে। ৬দিন আগে তোমার পিতা চলে গেছেন আমাদের ছেড়ে। সেদিন তোমার সাথে দেখা, বললে না তো তুমি অসুস্থ? তুমি পরিণত বয়সে পুঠিয়া থিয়েটারে এসেছিলে। থিয়েটারের কর্মকর্তারা তোমার থেকে বয়সে ছোট। কিন্তু কখনও কোন সময়, কোন অবস্থায় তোমার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে অনিহা প্রকাশ করোনি। পুঠিয়া থিয়েটারের বড় বড় কর্মযজ্ঞে তুমি ছিলে নেপথ্যের কান্ডারী। রাত ৩টায় উৎসবের কাজ শেষ হতেই, আবার ভোর ৫ টায় তোমাকে দেখা গেছে মাছের আড়তে। মঞ্চ সাজানো, চেয়ার গোছানো, আলোর কাজ সহ যাবতীয় কাজ করেছো। তোমার বড় দুঃখ ছিল। কোনো কর্ম ছিল না তোমার। বেকারত্বের শতভাগ তুমি দেখেছো। কিন্তু কখনও বুঝতে দাওনি। দেখা হলেই মুখে এক চিলতে হাসি, কখনও হারিয়ে যেতে দেখিনি।
কুষ্টিয়া লালন উৎসবে যেতে বেলা ১২টায় রওনা দিই। তখনও তোমার খাওয়া হয়নি। বেলা ৩ টায় মলিন মুখে নয়, এক চিলতে হাসি মুখে নিয়ে বললে- আমার তো সকাল থেকে নাস্তা করা হইনি। অথবা পতিস্বর, আত্রাই রবীন্দ্র কুঠি বাড়ি থেকে শাহজাদপুর রবীন্দ্র কুঠি বাড়ি হয়ে ফেরার পথে বিষন্ন মনে মাইক্রো বাসে বসে ছিলে। জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে? বললে- কর্ম নেই, আয় রোজগার নেই, বউ আর মেয়েটা শ্বশুর বাড়িতে আছে। মেয়েটার জন্য মনটা বড় খারাপ লাগে।
বাবু স্বপ্নের কি হবে? ঐতিহাসিক পুঠিয়াতে মুক্ত মঞ্চ হবে, রাজবাড়ির অঙ্গনে একটি নাট্যশালা হবে, পুঠিয়া রাজবাড়ির চারিদিকের জল সরোবর একই জলে পরিণত হবে। এই অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লোক শিল্পভান্ডার একত্রে গোথিত হবে। আমি জানি এ জাতির শিল্পের সনদে অনেক বাবু আসবে। কিন্ত তোমার মতো দায়িত্ব পরায়ন, সৎ, নিষ্ঠাবান বাবু আসবে কি? তুমি তো কখনও নেপথ্য থেকে বাহিরে আসোনি। বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের কেন্দ্রীয় নেত্রীবৃন্দ, দেশবরেণ্য শিল্প সংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ বা দেশখ্যাত শিল্পীদের সাথে কখনও পরিচিত হওনি। অভিনয় করতে বললেও কখনও করোনি। নেপথ্যে থেকে শিল্পের সকল কাজ করেছো সুচারু ভাবে। কেনো চলে গেলে বাবু? তোমাকে কি কোনো দিন ভুলতে পারবো। যেখানেই থেকো ভালো থেকো।